লবণ থেকে সিমেন্ট তৈরি করবে আরব আমিরাত  

ইমারত তৈরির প্রচলিত পদ্ধতি বদলে দিতে এবার লবণ থেকে সিমেন্ট তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্থপতি ওয়ায়েল আল আওয়ার ও জাপানিজ নাগরিক কেনেচি তেরামোতো। সংযুক্ত আরব আমিরাতের লবণাক্ত পানি লবণমুক্ত করার প্ল্যান্ট থেকে নির্গত বর্জ্য ‘ব্রাইন’ (ঘন লবণের মিশ্রণ) থেকে এই সিমেন্ট তৈরি করা হবে।

আল আওয়ার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের লবণাক্ত সমতল ভূমি বা ‘সাবকা’ থেকে তারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। এক সময় বাড়ি ঘর নির্মাণে এই সাবকা ব্যবহৃত হতো। মিশরের লিবিয়া সীমান্তে অবস্থিত মধ্যযুগীয় শহর ‘সিওয়া’র বাড়ি-ঘর তৈরিতে সাবকা থেকে তৈরি ব্লক ব্যবহার করা হয়েছিল।

তবে খনি থেকে সাবকা উত্তোলনের পরিবর্তে আওয়ার ও তেরামোতো লবণাক্ত পানি পরিশোধনাগারের বর্জ্য বা ব্রাইন ব্যবহার করতে চাইছেন। কারণ ব্রাইনে সাবকাতে বিদ্যমান প্রায় সবক’টি খনিজ লবণ বিদ্যমান।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে মিঠা পানি বা পান যোগ্য পানির প্রচণ্ড সংকট রয়েছে। সেই সংকট দূর করতে দেশটি পরিশোধনাগারের মাধ্যমে সাগরের লবণাক্ত পানি মিঠা পানিতে পরিবর্তিত করে। এই সব পরিশোধনাগার থেকে ঘন লবণের মিশ্রণ বর্জ্য হিসেবে নির্গত হয়। যা ব্যবস্থাপনার জন্যও দেশটিকে বেশ ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।

বিশ্বের সর্ব বৃহৎ পানি পরিশোধনাগারটিও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত। দেশটিতে প্রতিদিন প্রায় ২৮ মিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি পরিশোধন করার প্রয়োজন হয়। এর ফলে যে পরিমাণ ব্রাইন বা বর্জ্য সৃষ্টি হচ্ছে তা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

বিশেষ করে এই ব্রাইন সমুদ্রে ফেলা হলে তা সমুদ্রের পরিবেশকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাই এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনাকে দেশটি অগ্রাধিকারের মধ্যে রেখেছে। এই উদ্দেশ্যে গত বছর দেশটি প্রায় ১০ লক্ষ মার্কিন ডলার বরাদ্দ রেখেছিল।

আওয়ার ও তেরামোতোর বর্জ্য থেকে সিমেন্ট তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে অচিরে এই বর্জ্যই দেশটির সম্পদ হয়ে উঠতে চলেছে।

ব্রাইনে মূলত ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় খনিজ লবণ থাকে। আল আওয়ারের দাবি, এই ম্যাগনেসিয়াম নির্ভর সিমেন্ট পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের মতো সমান কার্যকর হবে। পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ক্যালসিয়াম কার্বনেট ব্যবহার করা হয়।

ইতিমধ্যে তাদের তৈরি ম্যাগনেসিয়াম সিমেন্ট দিয়ে এক তলা বিল্ডিং তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন আওয়ার ও তেরামোতো। ভবিষ্যতে ম্যাগনেসিয়াম সিমেন্টের উন্নয়ন ঘটানোর মধ্য দিয়ে এর দ্বারা বহুতল ইমারত নির্মাণ করাও সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

 

টাইমস/এনজে/এসএন

Share this news on: